ক্রিপ্টোকারেন্সি কী? ক্রিপ্টোকারেন্সি কিভাবে কাজ করে?

ক্রিপ্টোকারেন্সি কী?

ক্রিপ্টোকারেন্সি হলো একটি ডিজিটাল মুদ্রা যা ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়। যাতে পিয়ার-টু-পিয়ার (P2P) ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে সকল প্রকার লেনদেনের সুযোগ প্রদান করে থাকে। ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখানে অনেক রকম ডিজিটাল মুদ্রা তৈরি করা হয় যার মধ্যে বিটকয়েন, ইথিরিয়াম, BNB& USDT এসব হচ্ছে উল্লেখযোগ্য। ব্যাংক বা পেমেন্ট প্রসেসের ব্যবহার ছাড়াই  এই ডিজিটাল মুদ্রা আদান-প্রদান করা যায়। ব্লকচেইন প্রযুক্তি নির্ভর এই ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবহারকে বলা হয়ে থাকে ক্রিপ্টোকারেন্সি।

ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেট ক্যাপ কী?

ক্রিপ্টো মার্কেট ক্যাপ বলতে ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন'কে বুঝায়। যা ক্রিপ্টোকারেন্সির আকার ও মূল্য বুঝাতে ব্যবহৃত একটি ম্যাট্রিক পদ্ধতি। সাধারণত যেকোনো ডিজিটাল মুদ্রা বা ক্রিপ্টো কয়েনের বর্তমান মূল্যের সাথে মোট কয়েনের পরিমান কে গুণ করলে ঐ ডিজিটাল মুদ্রা বা ক্রিপ্টো কয়েনের মার্কেট ক্যাপ জানা যাবে। তবে বর্তমানে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে এমন অনেক প্লাট ফর্ম রয়েছে যেখানে এই হিসাবটি করে দেওয়া থাকে যার ফলে ব্যবহারকারীরা সহজে বিনিয়োগের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করতে পারে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেট ক্যাপ অধিকাংশ সময়ই ক্রিপ্টোকারেন্সির র‍্যাংক বা অবস্থান নির্ধারনে ব্যবহার হয়ে থাকে। যার ফলে মার্কেটে থাকা কয়েনসমূহের দুই ধরনের অবস্থা দেখা যায়।

ক্রিপ্টো তে ইনভেস্ট করে বিলিয়নিয়ার। The end of Cryptocurrency- Khalid Farhan

১। উচ্চ মার্কেট ক্যাপঃ

উচ্চ মার্কেট ক্যাপে সাধারণত অধিক স্থিতিশীল ও ব্যপকভাবে স্বীকৃত কয়েনগুলোকে নির্দেশ করে থাকে। যা ক্রিপ্টো মার্কেটে সবার উপরে অবস্থান করে থাকে।

২। নিম্ন মার্কেট ক্যাপঃ

নিম্ন মার্কেট ক্যাপে সাধারণত কম স্থিতিশীল কয়েনগুলোকে নির্দেশ করে থাকে। যা ক্রিপ্টো মার্কেটে নিচে অবস্থান করে থাকে এবং এগুলা অনেকটা অনুমান নির্ভর হয়ে থাকে।

বিটকয়েন- Bitcoin বিষয়টা কি? ক্রিপ্টোকারেন্সি টার ইতিহাস- খালিদ ফারহান

ক্রিপ্টোকারেন্সি কিভাবে কাজ করে?

আমরা পূর্বেই জেনেছি যে ক্রিপ্টোকারেন্সি কোনো মধ্যস্থতা(ব্যাংক,পেমেন্ট প্রসেস) ছাড়াই বিনিয়োগ করে থাকে যার ফলে এতে কঠোর নিরাপত্তার প্রয়োজন পড়ে। তাই ক্রিপ্টোকারেন্সিতে এই নিরাপত্তার জন্য ক্রিপ্টোগ্রাফি পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। কারণ ক্রিপ্টোকারেন্সি একটি বিকেন্দ্রীকৃত ডিজিটাল মুদ্রা।

এবার আসা যাক ক্রিপ্টোগ্রাফি বলতে কি বুঝায় সেই বিষয়েঃ
সহজ কথায় ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনকে সহজ ও অন-অনুমোদিত অ্যাক্সেস/ম্যানিপুলেশান থেকে ডেটাকে সুরক্ষিত রাখতে উচ্চ গাণিতিক অ্যালগরিদম পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীর তথ্য গোপন রাখার পাশাপাশি লেনদেনের সততা যাচাই করে।

Cryptocurrency-ক্রিপ্টোকারেন্সি কি? কিভাবে বানাবেন ও ট্রেডিং করবেন-শুরু থেকে শেষ-

সাধারণত ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনগুলো ব্লকচেইনে দৃশ্যমান হলেও পিছনের ব্যবহারকারীকে সহজে শনাক্ত করা যায় না। এসব অদৃশ্যমান ব্যবহারকারীকে শনাক্ত করতে হ্যাশ ফাংশন ও ডিজিটাল স্বাক্ষরের মতো একটি পদ্ধতি প্রয়োজন। ক্রিপ্টোকারেন্সিতে এই পদ্ধতিটিই হচ্ছে ক্রিপ্টোগ্রাফ যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীর তথ্য সহজের নির্ণয় করে ফেলতে পারে।

একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মধ্যে ব্লকচেইনের সমস্থ তথ্য সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে যা ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন সুরিক্ষিত করে রাখে। মূলত এটি বিকেন্দ্রীকৃত ডিজিটাল লেজার যা অন্তর্ভুক্ত অনেকগুলো নেটওয়ার্কের ডেটা সংরক্ষণ করে রাখে।

ফান্ড ট্রান্সফার পদ্ধতিটিতে যেকোনো এক ব্যক্তি অন্য যেকোনো ব্যক্তির কাছে ফান্ড ট্রান্সাফারের সুযোগ পেয়ে থাকে। প্রেরক তার প্রাইভেট কী ব্যবহার করে একটি ডিজিটাল স্বাক্ষর তৈরির মধ্যে দিয়ে নির্দিষ্ট পরিমান ফান্ড ট্রান্সফার আবেদন সম্পন্ন করে। তারপর লেনদেনটি ক্রিপ্টো নেটওয়ার্কভুক্ত কম্পিউটারে পাঠানো হয়। সেখানে নোডগুলো ডিজিটাল স্বাক্ষরটি যাচাই করে এবং প্রেরক ব্যক্তির যথাযথ ফান্ড আছে কি না তা দেখে লেনদেনটি বৈধ করে দেয়। উক্ত কাজটি মাইনাররা এমন ভাবে করেন যে ব্যবহারকারীদের এসব নিয়ে আলাদা ভাবতে হয় না।

কীভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে নিরাপদে লেনদেন করতে পারবেন!

যেহেতু ক্রিপ্টোকারেন্সি একটি ডিজিটাল মুদ্রা এবং এটি হাতের স্পর্শে বাহিরে তাই এই লেনদেনে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ হ্যাকার প্রতিনিয়ত মানুষে অনলাইন জগতের তথ্য হ্যাক করে নিয়ে ক্ষতি করেই যাচ্ছে। তাই ক্রিপ্টো ব্যবহারে আমাদেরও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে কাজ করতে হবে। নিচে কিছু সতর্কতামুলক বিষয় তুলে ধরা হলো-

১। ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করার পূর্বে এর সম্পর্কে ভালোভাবে ধারনা নিয়ে তারপর বিনিয়োগ করে লেনদেন করা।

২। লেনদেনের পূর্বে মার্কেট ক্যাপ ভালোভাবে পর্যালোচনা করা। কেননা, প্রতিনিয়ত মানুষ এখানে বিনিয়োগ করছে এবং এর পাশাপাশি অর্থ তোলেও নিচ্ছে তাই মার্কেট কিছু সময় পর পর উঠা-নামা করে।

৩। ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে সঠিক ধারনা নেয়ার জন্য বই, ব্লগ, পডকাস্ট, কোর্স করা ইত্যাদি সঠিক সিদ্ধান্ত হবে যদি ভালোভাবে ধারনা নিতে পারেন তবে।

৪। শুরুতেই বেশি পরিমানের অর্থ লেনদেন না করা। কেননা, ক্রিপ্টো মার্কেট প্রতিনিয়ত উঠা-নামা করে। সেই সাথে কিছু নিম্নমানের কয়েন রয়েছে যেগুলো থেকে লাভ করার চেয়ে লোকসান হয় বেশি। তাই সর্বদাই মার্কেট পর্যালোচনায় রাখাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

৫। কখনো কখনো অনেক বেশি মুনাফা অর্জন হবে আবার কখনো অনেক লোকসান হবে। তাই লেগে থাকাই সব থেকে ভালো সিদ্ধান্ত হবে। যেকোনো কাজের লাভ-লসের হিসাব রয়েছে। তাই লোকসান হলে ভেঙ্গে না পড়ে লেগে থাকতে হবে।

৬। বর্তমান সময়ে ক্রিপ্টোকারেন্সি নেটওয়ার্ক অনেক রয়েছে যাদের মধ্যে থেকে আপনাকে একটি জনপ্রিয় এবং বিশ্বস্থ এক্সচেঞ্জ খুজে বের করতে হবে। ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ বাছাই করার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ে লক্ষ্যে রাখতে হবে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফি, গ্রাহক সহায়তা, ইন্টারফেস ইত্যাদি।

৭। ক্রিপ্টোকারেন্সিতে ঠিক ততটুকুই বিনিয়োগ করুন যতটুকু লস হলে আপনার মানিসিক চাপ পড়বে না। কেননা, অধিক লাভের আশায় বেশি বিনিয়োফ করার ফলে অনেক সময় তা অধিক লোকসানের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ক্রিপ্টোকারেন্সি। কি কেন কিভাবে। Cryptocurrency। ki Keno Kivabe

প্রিয় পাঠক, ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগের পূর্বে অবশ্যই ক্রিপ্টো মার্কেট ক্যাপ সম্পর্কে ভালোভাবে ধারনা নিয়ে তারপর বিনিয়োগ করার অনুরোধ রইলো। সেক্ষেত্রে কোর্স,ব্লগ,পডকাস্টসহ এমন ভালো মাধ্যম হতে ধারণা নেয়াই উত্তম হবে। ক্রিপ্টোকারেন্সি ও অনলাইন সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেতে আমাদের সাইটি নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন এবং শেয়ার কর বন্ধুদের/নিকটস্থদের জানার সুযোগ করে দিতে পারেন,ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

খুটিনাটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url