পেট ব্যথা দূর করার উপায়। পেট ব্যথা করার কারণ।
পেট ব্যথা
আমাদের প্রত্যেকের কোন না কোন সময় পেটে ব্যথা হয়ে থাকে। পেট ব্যথা হচ্ছে উদর অংশ বা বুক ও কুচকির মধ্যবর্তী অংশে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হওয়াকে বুঝায়। পেটে ব্যথা হওয়ার অনেক গুলো কারণ রয়েছে। যার মধ্যে পাকস্থলী, যকৃত, অগ্ন্যাশয়, পিত্ত কোষ, অন্ত্র ইত্যাদির যেকোনো একটির ত্রুটি দেখা দিলে পেটে ব্যথা শুরু হয়। এছাড়াও অধিক পরিমানে ফাস্ট ফোড, মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া থেকেও পেটে ব্যথা হয়ে থাকে।
পেট ব্যথার কারণ
পেটে ব্যথা হওয়া বেশি গুরুতর না হলেও কিছু কিছু সময় এই ব্যথা দীর্ঘক্ষন স্থায়ী হয়ে ব্যথা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। পেটে ব্যথা তখন হয় যখন শরীর অধিক ক্লান্ত থেকে পেশীগুলো প্রসারিত হয়, খাদ্যে বিষক্রিয়া, খাদ্যে এলার্জি, দূর্ঘটনাজনিত আঘাত, আলসার হওয়া, পেটে গ্যাস হওয়া ইত্যাদি হয়ে থাকে। এছাড়াও টিউমার ও সিস্ট পেট ব্যথার কারণ হয়ে থাকে তবে তা অল্প সময় হয়।
নিচে পেটে ব্যথা হওয়ার কিছু কারণ উল্লেখ করা হলোঃ
১। পেপটিক আলসার ডিজিজঃ
পেপটিক আসলার হলো আমাদের পাকস্থলীর ভিতর পিচ্ছিল একটি পর্দা রয়েছে যেখানে ক্ষত বা চিড় দেখা দিলে খাবার খাওয়ার পর সেই পর্দা হতে ব্যথা অনুভূত হয়। তাকে পেপটিক আসলার ডিজিজ বলে।
২। অ্যাসিডিটি বা অম্বলঃ
আমাদের পাকস্থলীতে HCL নামক একটি এসিড রয়েছে যার প্রধান কাজ হচ্ছে খাবারগুলোকে হজমে সহায়তা করা। কিছু কিছু সময় পাকস্থলীর এই এসিড খাদ্যনালীর উল্টো দিকে আসতে শুরু করে যার ফলে এপিগ্যাস্ট্রিক ব্যথা সৃষ্টি হয়।
৩। গ্যাস্ট্রিক আলসারঃ
গ্যাস্ট্রিক আলসার হচ্ছে পাকস্থলীতে ছিদ্র বা চিড় ধরে যাওয়ার ফলে সৃষ্ট সমস্যাকে বুঝায়। এটি সাধারণত জীবাণুঘটিত সংক্রমণ, অতি উচ্চ মানের ব্যথার ঔষধ সেবন ও মশলাযুক্ত খাবার গ্রহণের ফলে সৃষ্টি হয়।
৪। অ্যাপেন্ডিসাইটিসঃ
পেটের নিচে ডান দিকে অবস্থিত বৃহদান্ত্র অংশের সংযোগস্থলে আঙ্গুলের ন্যায় দেখতে ছোট পাউচটিকে অ্যাপেন্ডিক্স বলে। বিভিন্ন কারণে অ্যাপেন্ডিক্সে প্রদাহ সৃষ্টি হয় যাকে অ্যাপেন্ডিসাইটিস বা অ্যাপেন্ডিক্সের ব্যথা বলে। অ্যাপেন্ডিক্সের ব্যথা বেশি গুরুতর হয়ে থাকে এবং জরুরী ভিত্তিতে রোগীকে চিকিৎসকের নিকট নিয়ে যেতে হয়।
৫। হার্নিয়াঃ
ক্ষুদ্রান্ত্রের চারপাশের ফেসিয়া নামক সংযোগকারী টিস্যু রয়েছে। যখন ক্ষুদ্রান্ত্র বা চর্বিযুক্ত টিস্যুর মতো কোন অঙ্গ এই ফেসিয়া টিস্যুর দুর্বল যায়গা দিয়ে বের আসে তখন তাকে হার্নিয়া বলে।
৬। জেনারেল পেরিটোনাইটিসঃ
পেটের ভিতরের দেয়ালে অবস্থান করে পৈটিক অঙ্গগুলোকে ডেকে রাখে যে টিস্যুটি তাকে পেরিটোনিয়াম বলে। বিভিন্ন সময় এই স্থানে প্রদাহ সৃষ্টি হয় যা জীবাণুঘটিত কিংবা ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট।
৭। সাইকোজেনিক কজেজঃ
মানসিক চাপ, মনমরা ভাব, উদ্বেগ এসব কারণে কোন কোন সময় পৈটিক প্রদাহ সৃষ্টি হয়ে থাকে। রোগী যখন মানসিক চাপ থেকে মুক্তিলাভ করে তখন ে ধরনের ব্যথা চলে যায়।
৮। রেফার্ড পেইনঃ
কিছু কিছু সময় ব্যথার উৎপত্তি স্থান ভিন্ন ভিন্ন যায়গায় গয়ে থাকে। সেই সাথে ব্যথা অনুভুতির স্থানও ভিন্ন যায়গায় হয়। তাকে রেফার্ড পেইন বলা হয়। রেফার্ড পেইনগুলো হচ্ছে নিউমনিয়া, ফুসফুসগত সংক্রমণ, মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন ইত্যাদি।
পেট ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায়
খাবার খাওয়ার সময় তারাতাড়ি করে খেতে গিয়ে শরীরে বাতাস প্রবেশ করে ফলে পেট ফেপে যায়, গ্যাস বেড়ে যায় ও পেট ফুলে যাওয়ার মত সমস্যা তৈরি হয় যা থেকে পরবর্তীতে পেটে ব্যথা শুরু করে। পেটে ব্যথা যেকোনো সময় হতে পারে তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত কিছু ঘরোয়া উপায় জেনে রাখা। নিচে পেট ব্যথা দূর করার কিছু ঘরোয়া সম্পর্কে বর্ণনা করা হলোঃ
১। আদা কুচি/ আদা চাঃ
আদাতে রয়েছে অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি যা শরীরের প্রদাহ দূর করতে সাহায্যে করে। প্রাচীনকাল থেকেই আদাকে ব্যথা দূর করার ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি শরীরের ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে। তাই আদা কুচি করে বা চায়ের সাথে আদা মিশ্রিত করে খেতে পারেন।
২। পুদিনা পাতাঃ
পুদিনা পাতা কে বলা হয় পাকৃতিক ব্যথানাশক ঔষধ। ব্যথা বা বমি ভাব দূর করতে পুদিনা পাতা চিবিয়ে বা চায়ের সঙ্গে মিশ্রিত করে খাওয়া অনেক উপকারি।
৩। অ্যাপেল সিডার ভিনেগারঃ
আমাদের অন্ত্রে কিছু ব্যকটেরিয়া রয়েছে যাদের সচল রাখতে এবং খাবার হজম হতে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। কারণ, অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে এসিড স্টার্চ যা খাবার হজমে ভূমিকা পালন করে। তাই এক কাপ পানিতে এক চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার ও সাথে এক চামচ মধু যুক্ত করে খেলে পেটের ব্যথা সহজেই চলে যাবে।
৪। কলা ও আপেল খাওয়াঃ
কলা ও আপেলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার যা পেটের ব্যথা এবং বমি বমি ভাব দূর করতে সহায়তা করে।
৫। টুস্ট বিস্কুট/ পোড়া রুটিঃ
পেটের ব্যথা কমাতে টুস্ট বিস্কুট ও পোড়া রুটি অনেক সহায়তা করে। কেননা,টুস্ট বিস্কুটে তেল থাকে না এবং পোড়া রুটি পেটের ব্যথা কমাতে অনেক কার্যকারী ভূমিকা পালন করে।
৬। সিদ্ধ চাল বা ভাতঃ
ভাত খেলেও পেটের ব্যথা দূর হয়ে যায়। কারন,ভাতের মধ্যে কোনো প্রকার মশলা ও লবণ থাকে না। তাই পেটে ব্যথা হলে মশলাযুক্ত খাবার ত্যাগ করে নরম ভাত ও এর সাথে পাতলা পানি জাতীয় কিছু খাওয়া।
৭। কিশমিশ খাওয়াঃ
পেটের ব্যথা দূর করতে কিশমিশ অনেক ভূমিকা পালন করে থাকে। এক গ্লাস পানিতে কতগুলো কিশমিশ ভিজিয়ে রাখবেন, তারপর এগুলো পিশে খালি পেটে খেয়ে নিবেন। তাহলে আপনার পেটের ব্যথা অনেকাংশেই চলে যাবে এবং পেটে ঠান্ডা অনুভূত হবে।
প্রিয় পাঠক, উপরে উল্লেখিত ঘরোয়া এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে খুব দ্রুত পেটের ব্যথা দূর হয়ে যাবে। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত এমন আরো অনেক টিপস পেতে আমাদের সাইটি নিয়মিত ভিজিট করুন এবং পরিচিতদের মধ্যে শেয়ার করে সবাইকে জানার সুযোগ করে দিন, ধন্যবাদ।
খুটিনাটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url