এলার্জি দূর করার উপায় ৫টি
এলার্জি কি?
আমাদের শরীর রোগ জীবাণু প্রতিরোধ করে। শরীরের এই প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থার ত্রুটি হলো এলার্জি। এলার্জির কারণে ভোগে থাকেন অনেকেই। এলার্জির যন্ত্রণা ভুক্তভোগীরাই জানেন। সুস্বাদু সব খাবার সামনে রেখেও কেউ খেতে পারেন না শুধু এলার্জির ভয়ে।
যেমন আমরা মাছ মাংস ডিম দুধ খেয়ে থাকি। কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের এই সাধারন খাবার খেলে তাদের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ তাদের এসব খাবারের প্রতি এলার্জি আছে।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ইউরোপের জনসংখ্যার মধ্যে ২০% মানুষের দৈনন্দিন এলার্জি বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করছে। WHO জানিয়েছে যে কোন দেশের মোট মানুষের ১০% থেকে ৪০% মানুষের এলার্জি আছে।
আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ভারতবর্ষে ভারতীয় মোট জনসংখ্যার ২০% থেকে ৩০% মানুষ বিভিন্ন রকমের এলার্জি রোগে ভুগেন। যে সকল অক্ষতিকর বহিরাগত বস্তুর ক্ষেত্রে লড়াই করে তাদের এলার্জেন বলা হয়।
এলার্জিজনিত রোগঃ
এলার্জি অনেক সময় দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের সিস্টেমকে প্রবাহিত করে। এর ফলে আমাদের দেশ সহজে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে আমাদের দেহে বাইরের কোনো ক্ষতিকর বস্তু যেমন ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া গ্রহণের সম্ভাবনা কেও বাড়িয়ে তোলে।
এর মধ্যে রয়েছে সাধারণ ভাইরাস জনিত ভাইরাস। সর্দি, নাক, হাঁচি এবং কাশি সৃষ্টি করে। এই এলার্জি হাঁপানি রোগীর অবস্থা আরো খারাপ করে তোলে। ভারত ও বাংলাদেশের এলার্জি এবং অ্যাজমা ফাউন্ডেশন অনুমান করে প্রায় ৬০ % লোককে এই এলার্জি হাঁপানি প্রভাবিত করে। মারাত্মক এলার্জির কারণে অ্যানাফিল্যাক্সিস হতে পারে। যা আপনার জীবননাশের কারণ হতে পারে।
এলার্জি বা অ্যালার্জি থেকে মুক্তির কার্যকর উপায়- ডাঃ তাসনিম জারা
এলার্জির প্রকারভেদঃ
ইমিউন সিস্টেমের কাজ হল রোগ জীবাণুগুলির করে দেহকে সুস্থ রাখা। এলার্জি বহু রকমের হতে পারে। যথাঃ
১। সান এলার্জি
২। ফুড এলার্জি
৩। সংস্পর্শ জনিত এলার্জির ত্বক প্রদাহ
৪। ল্যাটেক্স এলার্জি
৫। এলার্জিক রাইনাইটিস
ইত্যাদি আরো অনেক এলার্জির নাম রয়েছে।
১। সান এলার্জিঃ
কারো সূর্যের আলো সূর্য না হলে তার সান অ্যালার্জি হতে পারে। সাধারণত এই রোগটি হতে পারে যাদের বয়স ৩৫ বছরের মধ্যে সেই তরুণদের মধ্যে শুরু হয় তবে বা বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যেও এটি দেখা যায়। এটি ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের বেশি দেখা যায়।
নাকের এলার্জি ও সর্দি কাশি দূর করার উপায়- Dr. Syed Farhan Ali Razib
২। ফুড এলার্জিঃ
অনেকের খাবারের মধ্যেও এলার্জি হতে পারে। যেমন ডিম, দুধ, ময়দা ইত্যাদি। উন্নত বিশ্বে মোট জনসংখ্যার ৪% থেকে ৮% লোকের একটি করে খাবারের ফুড এলার্জি আছে। এই এলার্জি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৩-৬% শিশু এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১-২% প্রাপ্তবয়স্কদের আক্রান্ত করে।
৩। সংস্পর্শ জনিত এলার্জির ত্বক প্রদাহঃ
বহিঃস্থ উপাদান এলার্জেনের সংস্পর্শে যদি ত্বকে কোথাও শুকনো খসখসে, ছোট ছোট দানার মত হয়ে উঠে তাহলে সেটাকে সংস্পর্শ জনিত ত্বক প্রদাহ বলে।
৪। ল্যাটেক্স এলার্জিঃ
রাবার বা ইলাস্টিক থেকে অনেক সময় এলার্জি হতে পারে। লেটেক্স এলার্জি হল রাবারের লেটেক্সে পাওয়া প্রোটিনের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া। এইসব পণ্য ব্যবহারের সময় ল্যাটেক্স এলার্জি দেখা দেয়।
৫। এলার্জিক রাইনাইটিসঃ
এলার্জির রাইনাইটিস রোগটি হল নাকের প্রদাহ। যা দুই ধরনের হয়।একটি সিজনাল এলার্জিক যেটি বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় হয়। আরেকটি পেরিনিয়াল এলার্জিক রাইনাইটিস। যেটি আমাদের দেশে আনুমানিক ১০%থেকে১৫%।
এলার্জি থেকে মুক্তির উপায়- Dr. Tajib Kumar Saha
এলার্জির কারণঃ
এলার্জি যেকোনো বয়সে শুরু হতে পারে বেশিরভাগ খাবারে এলার্জি অল্প বয়স এবং বয়স্ক মানুষদের বেশি হয়। তবে এলার্জির অবস্থার জন্য বেশ কয়েকটি ঝুঁকির কারণ রয়েছে। এলার্জির কারণ নির্ণয় করে তা প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ গুলো নিচে দেওয়া হলোঃ
১) ঘরের ধুলোর আস্তরণ থেকে এলার্জি হতে পারে।
২) অ্যান্টিজেনের এক্স পোজারের সময়, এন্টিবায়োটিক ব্যবহার এবং অন্যান্য অনেক কারণ আর কিছু কখনো জানা যায়নি এগুলো এলার্জির সৃষ্টি করে।
৩) সাধারণত দুধ, ডিম, চিনাবাদাম, গাছ বাদাম, সামুদ্রিক খাবার, সেলফিশ, সয়াবিন এবং গম খেলে ফুডএলার্জি হতে পারে।
৪) শীতের দিনে সাধারণত কোড এলার্জি প্রবণতা বেড়ে যায়। শীতের ঠান্ডা বাতাস বা আবহাওয়ার কারণে এটি বেশি হয়ে থাকে।
৫) এলার্জি ও এজমা হওয়ার অন্যতম কারণ হলো পারিবারিক ইতিহাস বা জেনেটিক্স।এটি একটি বড় ভূমিকা পালন করে। যদি বাবা মা বা ভাই-বোনদের এলার্জি থাকে তাহলে এলার্জির হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
৬) বিভিন্ন টাইপ কসমেটিকের মাধ্যমেও এলার্জি হতে পারে।
এলার্জির লক্ষণঃ
এলার্জির কিছু লক্ষণ দেখা যায়। সেগুলো হল ঃ
১) ব্রণে পরিণত হওয়া
২) চামড়ায় চুলকানি, রেশ বা ফুসকুড়ি হওয়া
৩) চোখে চুলকানি, চোখ থেকে পানি পড়া, লাল হওয়া ও ফুলে যাওয়া
৪) ত্বকের কালার পরিবর্তন হওয়া। যেমন, লাল দাগ হওয়া
৫) চুলকানি হওয়া
ইত্যাদি আরো অনেক লক্ষণ দেখা যায়।
চোখে এলার্জি বা চুলকানির কারণ ও করণীয়- ডাঃ আশরাফুল হক
এলার্জি দূর করার কয়েকটি উপায়ঃ
১) তুলসী পাতা দিয়েঃ
সাধারণত তুলসীতে রয়েছে ব্রড স্পেক্ট্রাম এন্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য কে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে থাকে। তাছাড়া এটিতে রয়েছে এন্ট্রি ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য সাধারণত ফুলে যাওয়া এবং চুলকুনি হ্রাশ করতে সাহায্য করে থাকে। এটি প্রাকৃতিকভাবে ত্বকে এলার্জি থেকে মুক্তি দিতে কার্যকরী একটি উপায়।
যেভাবে ব্যবহার করবেন- প্রথমে আপনাকে হাতের তালুতে একমুঠো তুলসী পাতা নিতে হবে এবং সেগুলো ভালো করে ধুতে হবে। তারপর পাতাগুলি আপনাকে একটি ব্লেন্ডারে পিষে নিতে হবে। তারপর যে পেস্টটি তৈরি হবে সেটি আক্রান্ত স্থানের উপর প্রয়োগ করতে হবে। তারপরে এটি কমপক্ষে ৩০মিনিট রাখতে হবে। তারপর ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত কয়েকদিন এভাবে ব্যবহার করতে হবে।
২) নিম পাতা দিয়েঃ
নিম পাতার রয়েছে অসংখ্য ঔষধি গুণ। এটি সাধারণত প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্যর কারণে লালচে ভাব ফুলা ভাব এবং চুলকুনি লাঘব করতে পারে। নিমকে প্রাকৃতিক অ্যান্টিহিস্টামিন বলা হয়ে থাকে তাই এটি মুখের ত্বকের এলার্জির জন্য ঘরোয়া প্রতিকারে এর ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন- প্রথমে নিম পাতাগুলোকে শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর তারপর এগুলোকে একটি ব্লেন্ডারের সুন্দরভাবে পিষে নিতে হবে। তারপর আক্রান্ত স্থানের উপর পিষে নেওয়া পেস্ট টি প্রয়োগ করতে হবে এবং ৩০ মিনিট রাখতে হবে।
৩) অ্যাপেল সিডার ভিনেগারঃ
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার সাধারণত এবং হজম জনিত সমস্যা দূর করতে ব্যবহার করা হয়, তেমনটা নয়। তবে ওজন হ্রাস করা বা ডায়রিয়াস নিরাময়ের জন্য এটি কেবল দুর্দান্ত স্কিনকেয়ার এজেন্টই নয়। অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে এসিটিক এসিড রয়েছে। যা ত্বকের চুলকানি এবং এলার্জির প্রভাব কমায়। কিন্তু এটি সংবেদনশীল ত্বকে ব্যবহার ঠিক না।
যেভাবে ব্যবহার করবেন- এক কাপ গরম জলে এক টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে নিন। এবার তুলার সাহায্যে এ মিশ্রণটি লাগান। এবার এটি শুকনো ছেড়ে রেখে ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন। এলার্জি থেকে মুক্তি পেতে আপনি দিনে অন্তত দুবারই এটি করতে পারেন।
৪) বেকিং সোডাঃ
বেকিং সোডা ত্বকের এলার্জির জন্য একটি দুর্দান্ত ঘরোয়া উপায়। এটি ত্বকের ফুসকুড়ি দূর করতে সহায়তা করে,চুলকানি থেকে মুক্তি দেয় এবং ত্বকের আরো প্রদাহ রোধ করে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন- আধা চা চামচ বেকিং সোডা কিছু জলে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় প্রয়োগ করুন এবং এটি ধুয়ে ফেলার আগে কয়েক মিনিটের জন্য রেখে দিন। এটিকে আর বেশি দিন রাখবেন না। কারণ বেকিং সোডা নিজেই আরো জ্বালা করতে পারে।
৫) আদাঃ
আদাতে এন্ট্রি মাইক্রোবিয়াল এবং এন্ট্রি ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যা বিভিন্ন ধরনের ত্বকে এলার্জির চিকিৎসায় ভালো কাজ করে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন- একটু আদা টুকরো টুকরো করে এক কাপ জলে রাখুন এবং সসপ্যানে মিশ্রণটি সিদ্ধ করুন। এটি পাঁচ মিনিটের জন্য সিদ্ধ হতে দিন। আদা তরল করুন এবং এটি ঠান্ডা হতে দিন। আক্রান্ত স্থানে তুলার বল দিয়ে তরলটি প্রয়োগ করুন ।
পরিশেষে বলা যায়, ত্বকের এলার্জি গুলি মোকাবেলায় বিশেষত বিরক্তিকর হতে পারে। এগুলো বিভিন্ন এলার্জেন যেমনঃ ধাতু, গাছপালা, পোকার কামড়, পোশাক, চুল এবং খাবারের কারণে হতে পারে। উপরের তালিকাভুক্ত প্রতিকার গুলোই সময়ের সাথে সাথে ব্যবহার করবেন। আশা করছি এলার্জির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন।
- সাদিয়া ইসলাম
খুটিনাটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url