মাথা ব্যথা কেন হয়? মাথা ব্যথা থেকে মুক্তি লাভের উপায়।

মাথা ব্যথা বা হেডেক মানে কি?

প্রতিটা মানুষের শারীরিক ও মানসিক কিছু না কিছু রোগ অবস্যই থাকে। মানুষের এই শারীরিক সমস্যা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি প্রধান সমস্যা হলো মাথা ব্যথা বা হেডেক। সাধারণত মাথা ব্যথা কোন প্রকার রোগের অন্তর্ভুক্ত নয়। এটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের মানসিক চাপ, স্কেলিটাল মাংসপেশির চাপ, মাইগ্রেন অথবা দেহের বিভিন্ন ফ্যাক্টরজনিত উপসর্গ থেকেই তৈরি হয়ে থাকে। তাই মাথা ব্যথাকে কোন রোগের অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। আমাদের শরীরের মধ্যে থাকা কলা-কোষের কার্য সম্পাদন করার জন্য বিভিন্ন সময়ে দেহে বিশেষ করে মাথা, ঘাড় ও মুখের মধ্যে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। যার মধ্যে  মাংস পেশীর টান, স্ট্রেস, অ্যালার্জন, অনিদ্রা ও ডিহাইড্রেশন উল্লেখযোগ্য। এসব সমস্যা কলা কোষের অভ্যন্তরে ট্রিগার তৈরি করে।  বিভিন্ন ট্রিগার বিভিন্ন ধরনের ব্যথা এবং উপসর্গ তৈরি করে।

মাথা ব্যথার কারণ কি?

বর্তমান সময়ে প্রতিটা মানুষের মাথা ব্যথা এই সমস্যা বিদ্যমান থাকবেই। তাই বিশেষজ্ঞরা প্রতিনিয়ত এই সমস্যার অনেকগুলো উপায় বের করছেন। তবে মাথা ব্যথা করার অনেকগুলো কারণের মধ্যে বিশেষ কিছু কারণ হলো  অতিরিক্ত চিন্তা করা, মাইগ্রেন সমস্যা, অপর্যাপ্ত ঘুম ইত্যাদি। মাথা  ব্যথার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম কিছু কারণ নিয়ে আজকে আলোচনা করবো এবং পাশাপাশি মাথা ব্যথা থেকে খুব সহজে মুক্তি লাভের কিছু উপায় সম্পর্কে। চলুন শুরু করা যাক,

১। মাইগ্রেনঃ

পুরুষদের তুলনায় নারীরা মাইগ্রেনে বেশি ভোগে থাকে। সাধারণত ১৫-১৬ বছর বয়স হলেই মাইগ্রেন শুরু হয় যা ৪০-৫০ বছর বয়স পর্যন্ত স্থায়ী হয়। প্রথমে মাথার যেকোনো এক প্রান্তে এর ব্যথা শুরু হয় এবং পরের বার অন্য প্রান্ত হয়ে থাকে। মাথার দুই পাশের রক্তনালী টনটন করছে বলে মনে হয়। আলো বা শব্দে মাইগ্রেনের তীব্রতা বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে বমি বমি ভাব আসতে থাকে। অন্ধকার স্থানে অবস্থান করলে ব্যথা কমতে শুরু করে এবং আলোর সামনে গেলে আলোক রশ্মি নারাচারা করছে বলে মনে হয় যখন ব্যথা শুরু ঠিক তার পূর্ব মুহুর্তে।

মাথা ব্যথার ঘরোয়া সমাধান- ডাঃ তাসনিম জারা

২। অতিরিক্ত চিন্তা করাঃ

অতিরিক্ত চিন্তার ফলে মাথার দিকের মাংস পেশীর সংকোচন শুরু হয়। মাংস পেশীর এই সংকোচনের ফলে মাথা ব্যথা শুরু হয়। সমস্ত মাথা জুড়ে ব্যথা হতে থাকে যার ফলে মনে হয় যেন মাথা কেউ চেপে ধরে আছে। তবে মাইগ্রেনের মতো এতো তীব্রতর ব্যথা অনুভূত হয় না, তুলনামূলক কম হয়। দুশ্চিন্তা, পারিবারিক সমস্যা, পেশাগত কিংবা মানসিক চাপের কারণে এই ব্যথা শুরু হয়ে থাকে যা কয়েকঘন্টা থেকে কয়েকদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

মাথা ব্যথা প্রতিরোধে সেরা ৩টি টিপস- Professor Dr. Altaf Sarker

৩। অপর্যাপ্ত ঘুম/অনিদ্রাঃ

আমাদের বয়স অনুপাতে ঘুমানোরও নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। যার ত্রুটি হলে শরীরে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে মাথা ব্যথা অন্যতম। কেননা, সারাদিনের ব্যস্ততার ফলে দেহের সকল মাংস পেশী ক্লান্ত হয়ে থাকে,ফলে রক্ত চলাচল ঠিকভাবে হয় না বা স্বাভাবিকের তুলনায় কম হয়। তাই শরীরের ক্রিয়াকলাপ সচল রাখার পাশাপাশি সুস্থ থাকতে চাইলে অবশ্যই প্রত্যেকের পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমানো উচিত।

প্রচন্ড মাথা ব্যথা দূর করার উপায়/মাথা ব্যথা হলে করণীয়/মাথা যন্ত্রনা কমানোর উপায়/মাথা ব্যথার কারণ- Dr. Saiful, Physiotherapist

কীভাবে মাথা ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে?

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা রকম ব্যস্ততার ফলে মাথা ব্যথা হয়ে থাকে। কেননা ব্যস্ত সময়ে বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ হয়ে উঠে না। তবে হাজারো ব্যস্ততা মধ্যে মাথা ব্যথা কমানো সম্ভব কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করে। নিচে এমনি কিছু পদ্ধতি দেওয়া হলোঃ

১। হাতের আঙ্গুলের সাহায্যেঃ

হাতের তর্জনী আঙ্গুলের উপরিভাগ দিয়ে ঘাড়ের পিছনে টিপে দিলে মাথা ব্যথা অনেকাংশে চলে যায়। এই পদ্ধতিটি পুনরায় করে দেখতে হবে। কেননা, মাথা ব্যথা তখন শুরু হয় যখন আমাদের ঘাড়ের এই মাংস পেশী গুলো শক্ত হয়ে যায়। তাই কয়েকবার এই পদ্ধতি অনুসরণ করে ঘড়ের এই শক্ত স্থানে টিপে দিলেই মাইগ্রেনের ব্যথা, মাথা ব্যথা চলে যাবে।

২। ঔষধ সেবনঃ

মাথা ব্যথা শুরু হলে কখনোই উচ্চ ব্যথানাশক ঔষধ খাওয়া ঠিক না। তবে কিছু কিছু কম বেদনা নাশক ঔষধ রয়েছে যা খেলে মাথা ব্যথা কমতে শুরু করে যার মধ্যে প্যারাসিট্যামল, অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রফেন ইত্যাদি। যদি বমি বমি ভাব হয় তাহলে ডমপেরিডন জাতীয় ঔষধ খাওয়া। যদি মাথা ব্যথা তীব্র থেকে তীব্রতর হয় তাহলে ট্রিপটেন্ন জাতীয় ঔষধ খেতে হবে।

৩। ম্যাসাজ/মালিশ করাঃ

আমাদের শরীর অত্যাধিক ক্লান্ত হয়ে পড়লে মাথা ব্যথা শুরু হয়। তখন হাতের আঙ্গুল দ্বারা কপালের দুই দিকে রগের মধ্যে কিছুক্ষণ মালিশ করলে এই ধরনের মাথা ব্যথা ভালো হয়ে যায়। আঙ্গুলে ডগা দিয়ে ব্যথার স্থানে চাপ দিলে ব্যথা উপশম হয়।

৪। চা-কফি বা ক্যাফিনযুক্ত খাবার খাওয়াঃ

মাথা ব্যথা শুরু হওয়ার সাথে সাথে ক্যাফিনযুক্ত খাবার খেলে মাথা ব্যথা অনেকাংশে ভালো হয়ে যায়। চা-কফি বা ক্যাফিনযুক্ত খাবার মাথা ব্যথার উপশম হিসেবে কাজ করে থাকে।

৫। গোসল করাঃ

মাথা ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে গোসল করা একটি ভালো মাধ্যম। ঠান্ডা পানি মাথা ও ঘাড়ের মধ্যে কিছুক্ষণ দিয়ে রাখলে ক্লান্ত পেশী গুলো সতেজ হয়ে উঠবে। তাই মাথা ব্যথা শুরু হওয়ার সাথে সাথে গোসল করে নিতে হবে এবং লক্ষ্যে রাখতে হবে মাথা ও ঘাড়ের মধ্যে যেন পর্যাপ্ত ঠান্ডা পানি থাকে।

প্রিয় পাঠক, আমাদের প্রত্যেকের দিনের কোন না কোন সময় মাথা ব্যথা হয়েই থাকে। তাই মাথা ব্যথা হলে উচ্চ ব্যথানাশক ঔষধ সেবন না করে আমাদের দেওয়া পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতে পারেন। সেই সাথে পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে সবাইকে মাথা ব্যথা থেকে মুক্তি লাভের উপায় সম্পর্কে অবগত করতে পারেন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

খুটিনাটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url