রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায়
রক্তশূন্যতা কেন হয়?
রক্তে লোহিত কণিকা বা হিমোগ্লোবিন কম থাকলে তাকে রক্তস্বল্পতা বলা হয়। রক্তশূন্যতার আরেকটি নাম অ্যানিমিয়া। এটি খুব সাধারন একটি রোগ। শরীরে আয়রনের অভাব থাকলে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। কিন্তু আমরা অনেকে এটা গুরুত্ব দিতে চাই না। এই গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে এটি পরে মারাত্মক মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হয়ে যায়। চিকিৎসকরা বলেছেন, একজন পূর্ণবয়স্ক নারীর রক্তে ১২.১ থেকে ১৫.১ গ্রাম/ডেসিলিটার, পুরুষের রক্তে হিমোগ্লোবিন ১৩.৮ থেকে ১৭.২ গ্রাম/ ডেসিলিটার এবং শিশুদের রক্তে ১১ থেকে ১৬ গ্রাম/ ডেসিলিটার থাকা স্বাভাবিক। উপরোক্ত পরিমাণগুলো থেকে রক্তের হিমোগ্লোবিন কমে গেলে ধরে নিতে হবে তিনি রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন। তবে এ ধরনের সমস্যা সাধারণত পুরুষদের থেকে মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে জন্মদানের সময় এবং মাসিকের কারণে ও হয়ে থাকে। আবার লোহিতো রক্তকণিকা পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপন্ন না হওয়ার কারণেও এই সমস্যা হয়। রক্তস্বল্পতার কারণগুলোর মধ্যে অন্য একটি কারণ হচ্ছে পুষ্টিকর খাবার কম খাওয়া।
রক্তশূন্যতার লক্ষণ
এ রোগ কয়েকটি লক্ষণের নির্ণয় করা যায়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে অবসন্নতা, বমি, ঘাম হওয়া, বেশি ঠান্ডা অনুভব করা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, মাথা ঘোরা, বুকে ব্যথা, বেশি ক্লান্ত থাকা এই উপসর্গ গুলো দেখা দিলে বুঝতে হবে যে রক্তশূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। রক্তস্বল্পতা হলে শরীর নিস্তেজ হয়ে আসে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই রক্তশূন্যতায় খাবারের দিকে বেশি খেয়াল রাখতে হবে। শুধুমাত্র পুষ্টিকর কিছু খাবার গেলে রক্তশূন্যতা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হয়।
রক্তশূন্যতা থেকে মুক্তি পেতে করণীয়
১। টমেটোঃ
টমেটো রক্তস্বল্পতা দূর করতে খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। টমেটোতে ভিটামিন সি আছে যা অন্য খাবার থেকে আয়রন শুষে নেয়। টমেটোতে থাকা আয়রন, ভিটামিন সি রক্তস্বল্পতা সহ নানা রোগের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করতে সক্ষম। এছাড়া টমেটোতে বিটা কেরাটিন, ফাইবার এবং ভিটামিন ই আছে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন প্রতিদিন কমপক্ষে একটি টমেটো খাওয়ার জন্য। তবে এর থেকে বেশি খেলে আরো ভালো হয়। টমেটোর জুসও খাওয়া যেতে পারে। নিয়মিত খাদ্য তালিকায় এটা রাখলে ভালো হয়।
২। মধুঃ
মধু একটি উচ্চ ঔষধি গুন সম্পন্ন ভেষজ তরল। মধু আয়রনের একটি ভালো উৎস। আয়রন ছাড়াও এতে রয়েছে কপার ও ম্যাঙ্গানিজ। চিনি না খেয়ে চিনির বদলে নানা খাবারের মধু যোগ করা যেতে পারে। এতে চিনির ক্ষতিকর প্রভাব থেকেও বাঁচা যাবে। মধুতে থাকা উপাদান গুলো শরীরের হিমোগ্লোবিন প্রস্তুত করতে সহায়তা করে। তাই প্রতিদিন এক চামচ পরিমাণ মতো মধুর সাথে লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে রক্তশূন্যতার ঘাটতি পূরণ হতে পারে।
৩। কলিজাঃ
রক্তস্বল্পতা রোগের প্রধান কারণ হলো দেহে আয়রনের ঘাটতি হওয়া। এই আয়রনের ঘাটতি পূরণ করার জন্য কলিজা একটি অন্যতম খাবার। কলিজায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ভিটামিন বি। তাই যারা রক্তশূন্যতা ভুগছেন তারা নিয়মিত খাবার তালিকায় সম্ভব হলে কলিজা রাখতে পারেন। বিশেষত গরু বা খাসির কলিজায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। তবে উচ্চ রক্তচাপ যাদের আছে তারা অবশ্যই গরুর কলিজা থেকে দূরে থাকতে হবে।
৪। শাক-সবজিঃ
শাক-সবজি খেলে আয়নের ঘাটতি অনেকটা কমে যায়। বিভিন্ন রকমের সবজি যেমন কচুর লতি, বিট, কচু শাক, পালং শাক, ধনিয়া পাতা, পুদিনা পাতা, লেটুস ইত্যাদি নিয়মিত খেলে রক্ত শূন্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হতে পারে। কারণ এই শাক সবজিগুলোতে আয়রনের পাশাপাশি ফলিক এসিডও আছে। যা হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এর মধ্যে বিট আয়ন সমৃদ্ধ খাবার হওয়া খুব অল্প সময়ের মধ্যে দূর করে দেয়। যা দেহের লোহিত রক্ত কণিকা বৃদ্ধি করে। পালং শাকেও আয়রন ছাড়া ভিটামিন এ, সি, ই এবং ক্যালসিয়াম রয়েছে। যার রক্ত তৈরি করে থাকে।
৫। ফলমূলঃ
বহু খাবারেই আয়রন থাকে কিন্তু যদি শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি না থাকে তাহলে সেই আয়রন শরীর ঠিক করে গ্রহণ করতে পারে না। যার কারণে এমন ফল খাওয়া উচিত যাতে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। যেমন পেয়ারা লেবু কামরাঙ্গা আম আপেল ইত্যাদি। এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। যা অন্যান্য খাবার থেকে আয়রন পেতে শরীরকে সাহায্য করে। এছাড়াও বেদানার মত ফলও খেতে পারেন। তাতেও প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। সেই সাথে আরো একটি বিষয় মনে রাখতে হবে সেটা হচ্ছে খালি পেটে ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকা। কারণ খালি পেটে ফল খেলে ফলে থাকা ভিটামিন সি আয়রনকে শোষিত করে ফেলে। যার কারনে ফলমূল আধা ঘন্টা পর খেতে হবে। তাই সরাসরি আয়রন গ্রহণ করতে প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি ফল খাওয়া উচিত। তবে এছাড়াও আরো কিছু খাবার আছে ডিম, সয়াবিন বাদাম, সামুদ্রিক মাছ, কিশমিশ, ডার্ক চকলেট, ডাল, দুধ ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে যা শরীরের রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।
প্রিয় পাঠক, আমাদের শরীরে যত প্রকার সমস্যা দৃষ্টি হয়ে থাকে তা শুধুমাত্র আমাদের খাদ্য অভ্যাসের এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের জন্যই। তাই আমাদের প্রত্যকের উচিত বেশি বেশি সুষম খাদ্য গ্রহণের পাশাপাশি নিয়মিত শরীরের যত্ন নেওয়া। এমন স্বাস্থ্য বিষয়ক নানা রকম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে আমাদের সাইটি নিয়মিত ভিজিত করতে পারেন এবং অন্যদের সাথে শেয়ার করে সবাইকে জানার সুযোগ করে দিতে পারেন, ধন্যবাদ।
খুটিনাটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url