নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন

জন্ম নিবন্ধন

প্রতিটা মানুষের জন্মগ্রহণ করার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় তার জীবন চলা। তাই প্রতিটি দেশের সরকার জনগণের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য চালু করেছে জন্ম নিবন্ধন রেজিস্টার পদ্ধতি। যার মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরের প্রতিটি নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করা হয় এবং সেই তথ্য অনুযায়ী নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করা হয়।

আজকে আমরা শিখবো কিভাবে মোবাইল এবং কম্পিউটার দিয়ে নতুন করে জন্ম নিবন্ধন করা যায়।

মোবাইল এবং কম্পিউটার দিয়ে আবেদন পদ্ধতিঃ

নতুন জন্ম নিবন্ধন তৈরি করা মোবাইল এবং কম্পিউটার দিয়ে আবেদন পদ্ধতি একই রকম। প্রথমে আমরা আমাদের মোবাইল/কম্পিউটারের যেকোনো ব্রাউজারে (Chrome,Firefox etc) চলে যাবো। তারপর সার্চ বারে গিয়ে টাইপ করবো https://bdris.gov.bd/br/application। তারপর নিচের পেইজটি সামনে আসবে।
১। ১নং অপশনটিতে নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির কোন ঠিকানা  হতে জন্ম নিবন্ধনটি পেতে চাচ্ছে সেই ঠিকানা বাছাই করার জন্য বলা হয়েছে। যেহেতু প্রতিটা মানুষই তার জন্মস্থানে জন্ম নিবন্ধন করে থাকে তাই আমরা এখানে জন্মস্থান অপশনটি বাছাই করবো।
২। ২নং অপশনটি হচ্ছে তাদের জন্য যারা বাংলাদেশ এর বাহির থেকে তাদের জন্ম নিবন্ধনটি করতে চাচ্ছে। এখানে চেক বক্সটি টিক দিকেই ঐ ব্যক্তির অবস্থানরত দেশের নাম সামনে আসবে। সেখান থেকে উক্ত দেশটি বাছাই করতে হবে।
৩। ১নং অথবা ২নং অপশনটি সঠিকভাবে পূরণ করে ৩নং ধাপ "পরবর্তী" বাটনে ক্লিক করলে পরের ধাপে নিয়ে যাবে। তারপর নিচের পেইজটি আসবে।
৪। ৪নং বক্সের মধ্যে নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির নামের ১ম ও ২য় অংশ বাংলা এবং ইংরেজিতে সঠিকভাবে টাইপ করে দিতে। তারপর জন্ম তারিখ উল্লেখ করতে হবে। তারপর সন্তানের ক্রম সিলেক্ট করে লিঙ্গ সিলেক্ট করতে হবে।
৪.১। ৪নং বক্সে বয়স উল্লেখ করার পরে ৪.১নং বক্সটি সামনে আসবে। সেখানে থেকে "আমার কাছে এই ডকুমেন্টগুলি আছে" বাটনে ক্লিক করলেই পরের ধাপে নিয়ে যাবে।
৫। ৫নং বক্সের মধ্যে নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির জন্মস্থানের ঠিকানা বাছাই করে দিতে হবে। উক্ত ঠিকানায় নিবন্ধনটি তৈরি হবে যেহেতু আমরা ১নং বক্সের মধ্যে নিবন্ধনের আবেদন ঠিকানা জন্মস্থান সিলেক্ট করেছি তাই।
৬। ৪নং ও ৫নং বক্স সঠিকভাবে পূরণ করার পরে ৬নং ধাপ "পরবর্তী" বাটনে ক্লিক করলে পরের ধাপে নিয়ে যাবে। তারপর নিচের পেইজটি আসবে।
৭। পূর্বের ধাপে যদি কোনো তথ্য পরিবর্তন করা প্রয়োজন হয় তাহলে ৭নং ধাপ "পূর্ববর্তী" বাটনে ক্লিক করলে তা পূর্বের ধাপে নিয়ে আসবে এবং তা পরিবর্তন করা যাবে।
৮। ৮নং বক্সের মধ্যে নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির পিতার তথ্য সঠিকভাবে দিতে হবে। পিতার যদি জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে থাকে এবং সেখানে যদি তথ্যগুলো সঠিকভাবে দেয়া থাকে তাহলে ৮নং বক্সের "পিতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর" লেখা বক্সের মধ্যে পিতার জন্ম নিবন্ধন নম্বরটি দেয়ার সাথে সাথে পিতার বাংলা নাম, ইংরেজি নাম, ভোটার আইডি নম্বর অটো ফিলাপ হয়ে যাবে। আর যদি পিতার জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে সঠিকভাবে না থাকে তাহলে নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির সার্টিফিকেট অথবা পিতার ভোটার আইডি কার্ড থেকে নামের বানান গুলো সঠিকভাবে লিখে দিতে হবে। তারপর জাতীয়তা বক্সের মধ্যে বাংলাদেশী সিলেক্ট করলেই ৮নং বক্সটি সঠিকভাবে ফিলাপ হয়ে যাবে।
৯। ৮নং বক্সের অনুরূপ ৯নং বক্সটি সঠিকভাবে ফিলাপ করতে হবে নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির মা'য়ের তথ্য দিয়ে।
১০। ৮নং ও ৯নং বক্সসমূহের তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করা হয়ে গেলে ভালো ভাবে একটু দেখে নিয়ে ১০নং বক্সের ধাপ "পরবর্তী" বাটনে ক্লিক করে পরের ধাপে যেতে হবে। পরবর্তী বাটনে ক্লিক করার সাথে সাথে নিচের পেইজটি  আসবে।
১১। নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির স্থায়ী ঠিকানার তথ্য দেওয়ার জন্য ১১নং বক্সের মধ্যে "কোনটিই নয়" অপশনটি টিক দিলে ১১.১নং বক্সটি সামনে আসবে। সেখানে "জন্মস্থানের ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা একই" অপশনটি সিলেক্ট করে দিতে হবে। তবে সে ক্ষেত্রে যদি ঠিকানা একই না হয় তাহলে আলাদা সিলেক্ট করে দিতে হবে।
১২। ১১নং বক্সের ন্যায় ১২নং বক্সের মধ্যে নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির বর্তমান ঠিকানা সিলেক্ট করে দিতে হবে।
১৩। ১৩নং বক্সে "পরবর্তী" বাটনে ক্লিক করলে নিচের পেইজটি আসবে।


১৪। ১৪নং বক্সের মধ্যে নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির সাথে আবেদনকারীর সম্পর্ক বাছাই করতে বলা হয়েছে নিবন্ধনাধীন ব্যক্তি যদি ১০ বছরের সমান বা এর ছোট হয় তাহলে এই বক্সে পিতা/মাতা বাছাই করাটাই ভালো হবে। নিবন্ধনাধীন ব্যক্তি যদি ১০ বছরের বড় হয় তাহলে আবেদনকারী বক্সে নিজ বাছাই করে নিলেই হবে।
১৫। ১৫নং বক্সটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই বক্সের মধ্যে নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির যাবতীয় কাগজপত্র দিতে। এই কাগজপত্র যাচাই করেই নিবন্ধনটি রেজিস্টার হবে। প্রতিটার সাইজ হতে হবে ১০০ কিলোবাইটের(100kb) মধ্যে।
i)বয়স যদি ৪৬দিন-৫ বছরের মধ্যে হয় তাহলে টিকা কার্ড/ইপিআই কার্ড দাক্ষিল করলে হবে।
ii)বয়স যদি ৬-১০বছরের মধ্যে হয় তাহলে স্কুল প্রত্যয়ন দাক্ষিল করলে হবে।
iii)বয়স যদি ১১-১৭বছরের মধ্যে হয় তাহলে ব্যক্তির শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ দাক্ষিল করতে হবে।
iv)বয়স যদি ১৮-তদুর্ধ হয় তাহলে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ/ভোটার আইডি কার্ড দাক্ষিল করতে হবে।
**উপরোক্ত কাগজপত্রের সাথে বাড়ির চৌকিদারী খাজনার রশিদ বাধ্যতামূলক দাক্ষিল করতে হবে।
***বয়স যদি ১-৪৫দিনের মধ্যে হয় তাহলে শুধু পিতা-মাতা অনলাইন জন্মনিবন্ধন(বাংলা ও ইংরেজি করা যদি থাকে) অথবা ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে ইউনিয়ন সচিব মহোদয়ের নিকট নিয়ে গেলে ওনি বিনামূল্যে নিবন্ধনটি করে দিবেন।
১৫.১। ১৫নং বক্সের মধ্যে থাকা সংযোজন বাটনে ক্লিক করে নির্ধারিত কাগজ যেমনঃ সার্টিফিকেট,টিকা কার্ড,ভোটার আইডি কার্ড ও টেক্স রশিদ ইত্যাদি বাছাই করে আপলোড করতে হবে। তারপর ১৫.১নং বক্সটি সামনে আসবে। সেখান থেকে সার্টিফিকেট/ভোটার আইডি কার্ড/টিকা কার্ড/স্কুল প্রত্যয়ন ইত্যাদির ফাইল টাইপে ক্লিক করে কাগজপত্রের ধরন হিসেবে ১ম অপশন তথা চিকিৎসক কর্তৃক পত্যায়ন পত্র সিলেক্ট করতে হবে। তারপর টেক্স রশিদটিতে ফাইল টাইপ হিসেবে ২য় অপশনটি বাছাই করতে হবে।
১৫.২। ১৫.১নং বক্সে ফাইল টাইপ সিলেক্ট করার পরে Start এবং Cancel বাটন আসবে। সেখান থেকে "Start" বাটনে ক্লিক করলে কাগজটি আপলোড হয়ে যাবে। এইভাবে কাগজপত্র আপলোড করে দিতে হবে।
১৬। ১৫নং বক্সের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড দেওয়ার পরে ১৬নং বক্সে "পরবর্তী" বাটনে ক্লিক করলে নিচের পেইজটি আসবে।
১৭। এই ধাপটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এই ধাপে নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির সকল তথ্য দেখাবে। এই ধাপে নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির নিজের নাম(বাংলা ও ইংরেজি),পিতা-মাতার নাম(বাংলা ও ইংরেজি),বয়স, সন্তানের ক্রম, ঠিকানা(জন্মস্থান,স্থায়ী ও বর্তমান) ইত্যাদি যাচাই করে নিতে হবে যাতে করে নিবন্ধনের মধ্যে কোনো প্রকার ভূল না হয়।
১৮। এই বক্সে নিবন্ধনটি ভবিষ্যৎ অনুসন্ধানের/প্রয়োজনের জন্য একটি ফোন নম্বর দিতে হবে। ফোন নম্বরে ৬ সংখ্যার একটি ওটিপি কোড যাবে। সেই কোডটি "ওটিপি" নামের বক্সে দিতে হবে।
১৯। ওটিপি সঠিকভাবে দেওয়া হয়ে গেলে ১৯নং বক্সে থাকা "সাবমিট" বাটনটিতে ক্লিক করলেই আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে যাবে। তারপর নিচের পেইজটি চলে আসবে।
২০। "Success, আবেদনপত্রটি সফল ভাবে সাবমিট করা হয়েছে" এই লিখাটা আসলেই বুঝতে হবে আবেদন পক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে যা ২০ং বক্সে দেখানো হবে। এখানে আবেদন ট্র্যাকিং নম্বরটি দেখাবে যার মাধ্যমে নিবন্ধনের পরবর্তী কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।
২১। এই ধাপটি হচ্ছে সর্বশেষ ধাপ। এই ধাপে "আবেদনপত্র প্রিন্ট" এই বাটনে ক্লিক করতে হবে এবং আবেদন প্রিভিউ হিসেবে একটি পিডিএফ ফাইল দেওয়া হবে। উক্ত পিডিএফ ফাইল্টি যেকোনো কম্পিউটার দোকান থেকে প্রিন্ট করে ইউনিয়ন অফিসে জমা দিতে হবে।

নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন নিয়ে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথাঃ

নতুন জন্মনিবন্ধন করার আগে সকলের কিছু বিষয় জেনে নেয়া দরকার। সেগুলো হলোঃ-

১। পূর্বের হাতের লিখা জন্ম নিবন্ধন কিংবা অনলাইন বাংলা জন্ম নিবন্ধন আছে কিনা সেটা আগে দেখতে হবে। যদি হাতের লিখা জন্ম নিবন্ধন থেকে থাকে তাহলে ঐ জন্ম নিবন্ধনটা ইউনিয়ন সচিব মহোদয়ের নিকট নিয়ে গিয়ে অনলাইন করা আছে কিনা সেটা দেখতে হবে। যদি অনলাইন করা না থাকে তাহলে উপরের পদ্ধতি অনুযাই নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে হবে। আর যদি পূর্বের অনলাইন জন্ম নিবন্ধন থাকে তাহলে সেটা নতুন আবেদন না করে তথ্য সংশোধন আবেদন করতে হবে। জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধন কিভাবে করবেন সেই বিষয়ে আমাদের সাইটে আর্টিকেল রয়েছে।
২। নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার পরে সেটি যদি পসিবল ডুপ্লিকেট(Possible Duplicate) আসে অর্থাৎ এই তথ্যে আরো নিবন্ধন অন্য ইউনিয়ন অফিসে তৈরি করা আছে বলে তাহলে সেই আবেদনটি সচিব মহোদয়ের নিকট জমা দিয়ে সমাধান করে আনতে হবে।
*** অন্য একটি পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে। আবেদন করার সময় নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির নাম পরিবর্তন করে জন্ম নিবন্ধনটা তৈরি করে আবার সংশোধন আবেদন করে সঠিক করে ফেলা।
৩। নতুন জন্ম নিবন্ধন করার সময় সচল এবং সব সময় ব্যবহার হয় এমন একটি ফোন নম্বর দেওয়া যাতে করে পরবর্তীতে নিবন্ধন যেকোনো সংশোধনে এই ফোন নম্বরে ওটিপি কোড যাবে। তাই সচল ফোন নম্বর দেওয়াটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
৪। নতুন জন্ম নিবন্ধন করার পরেও যদি তা ভূল হয়ে যায় তাহলে তা ৪৫দিনের মধ্যেই সংশোধন আবেদনের মাধ্যমে ঠিক করে ফেলা। কেননা সাধারনত সংশোধন আবেদনসমূহ ইউনিয়ন অফিস থেকে রিসিভ করানোর পরে তা চলে যায় উপজেলা পর্যায়ে। সেখানে আবেদনে দেওয়া কাগজপত্র ভালোভাবে যাচাই করে তারপর রিসিভড করে দেওয়া হয়। কাগজপত্রে যদি সমস্যা থাকে তাহলে আবেদন বাতিল করে দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ৪৫দিনের মধ্যেই সংশোধন করে নিলে সেটা উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয় না।

প্রিয় পাঠক, সরকারি অনলাইন সেবা সম্পর্কিত যাবতীয় সকল তথ্য আমাদের সাইটে নিয়মিত দেওয়া হচ্ছে। আমাদের সাইট ভিজিট করে আপনার যাবতীয় সকল তথ্য সংগ্রহ করে নিতে পারেন এবং শেয়ার করে আপনার পরিচিত সবাইকে এই সেবা গুলো সম্পর্কে সঠিক ধারনা লাভ করার সুযোগ করে দেওয়ার আহব্বান রইলো, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

খুটিনাটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url