ডাক্তার ও তার মহৎ কর্মের উপলব্ধি

★আপনি কতটা মেধাবী এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আপনি কত ক্ষমতাধর এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আপনি কোন ক্যাডারে চাকুরী করছেন এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আপনি কত বড় নেতা এটাও গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনি একজন সদাচারী মানুষ কি না!

★জীবনের স্থায়িত্ব খুব বেশি সময়ের জন্য নয়। কেউ নিজকে কারো সাথে তুলনা করবেন না।কেউ ৫০ টাকা কেজি দরের চালের ভাত খাচ্ছে আবার কেউ ৩০০ টাকা কেজির চালের ভাত খাচ্ছে।এখানে মুখ্য সন্তুষ্টি।

★সকল মানুষের জীবনে প্রয়োজন সন্তুষ্টির। প্রয়োজনের অতিরিক্ত যা আছে তার থেকে কিছু  অসহায় মানুষের জন্য ব্যয় করে সমাজে কিছু অবদান রাখা।

★আমি ২০ বছর ৩০০ টাকা দামের কেসিও ঘড়ি ব্যবহার করেছি।আমার সময় দেখা প্রয়োজন। ব্রান্ড নয়। চার বছর আগে স্ত্রী ও সন্তান্দের ইচ্ছেয় সখ করে ব্রান্ডেড ঘড়ি কিনেছিলাম। এটা বিড়ম্বনা তৈরী করছে। তিন ঘন্টা খুলে রাখলে বন্দ হয়ে যায়। এটা নাকি ব্লাড কানেকশন এ চলে। এ ঘড়ি আমাকে সন্তুষ্টি দেয় নি।

★সৃস্টিকর্তার চোখে সেই শ্রেষ্ঠ মানুষ যিনি তাঁর ভয়ে ও সন্তুষ্টির জন্য অন্য মানুষের উপকার করেন। অমোঘ সত্য মৃত্যু অনিবার্য। নির্দিষ্ট সময় আসলে চলে যেতেই তো হবে। তখন নাম হবে লাশ।

★একজন পতিত বা পতিতা সার্ভিস দিয়ে টাকা নেয়। ধর্মীয় ভাবে এটা নিষিদ্ধ । কিন্তু ক্লায়েন্ট আমাদের মত ভাল নামধারী মানুষ।

★আমি বা আমরা অনেকেই দায়িত্বে থেকে সার্ভিস দেয়ার ক্ষেত্রে পতিতার মত সৎ নই। কারণ আমি বা আমরা দায়িত্ব ১০০ ভাগ নিষ্ঠার সাথে পালন করতে পারি না। আমার চাকুরী জীবনে আমি চেস্টা করেছি। শত ভাগ পারি নি। এটা আমার ব্যাক্তিগত ব্যর্থতা।

★আল্লাহ আমাদের সবকিছু দেখছেন এবং পরিকল্পনা করছেন। আমাদের দায়িত্ব, ভাল কিছু করার জন্য চেষ্টা করা।

★ডাক্তারদের অনেক প্রতিকূলতা নিয়ে কাজ করতে হয়। একজন সৎ পেশাদার  ডাক্তার তাঁর পরামর্শ ফি কত নিবে তা মার্কেট ইকোনমির যুগে কেউ নির্ধারণ করতে পারবে না। কারন উকিল বা ব্যবসায়ী কত টাকা নেয় এটা তাঁর পেশাদারিত্ব ও বাজারের অবস্থার উপর নির্ধারণ করে।

★আমাদের দেশে মেডিকেল  ল্যাব টেস্ট এর চার্জ অনেক কমানো যায়। এখানে রাষ্ট্রের রেগুলেটরি ভুমিকা জরুরী।

★সমাজের কোন কিছুই খাঁটি না। একটা পারসেপশান থেকে সমাজে রীতি নীতি গড়ে উঠে। যেটা বাংলাদেশের কালচারে নিষিদ্ধ তা অন্যদেশের কালচারে স্বাভাবিক।

★শুধু আল্লাহ প্রেরিত ধর্মগ্রন্থ সঠিক। সেই ধর্ম গ্রন্থ তে সব কিছুর সমাধানের মূলনীতি দেয়া আছে।

★কোন পেশায় আজকাল কেউই সন্তুষ্ট থাকতে চায় না কিছু সন্মানজনক ব্যাতিক্রম বাদে। অন্য পেশায় ও সেন্সিটিভিটি আছে। পাঁচ ঘন্টা বিদ্যুৎ বিহীন থাকলে আমরা পুরো বিদ্যুৎ বিভাগ কে ধুয়ে মুছে ফেলি।

★উকিলের পিছনে পয়সা দিতে কার্পন্য করি না কারন আমরা জিততে চাই। দামী হোটেল,রেস্তোরাঁয় বিল দিতে কার্পন্য করি না কারন আমরা ভাল খেয়ে পরিতৃপ্ত হই। পোষাকের ক্ষেত্রেও তাই।

★সমস্যা হলো ডাক্তার এর ফি। কারন মানুষ মনে হয় সন্তুষ্ট না। চিকিৎসা ব্যায়ের সিংহ ভাগ ঔষধ, অপারেশন, ইনভেস্টিগেশান এ যায়। মানুষ তাঁর চাহিদা অনুযায়ী সব আন্তর্জাতিক মানের চায়। কিন্তু বাস্তব কারনেই সেভাবে পাচ্ছে না। আপনি বাংলাদেশ এ থেকে আমেরিকান মানের রাষ্ট্রীয় আইনের প্রয়োগ , আর ওমানের বিচার ব্যবস্থা আশা করলে এটা দূরাশাই হবে। আপনি বাংলাদেশে থেকে এ দেশের  মাইন্ডসেট এ চলে আসুন । পারসেপশান ঠিক হয়ে যাবে। ডাক্তার মানেই সব কষ্টে হাসিমুখেই রোগী দেখবে।অসহায় অবস্থায় টাকা!!এগুলো আবেগ। বাস্তবতা এরকম হওয়ার কথা না।

★আমাদের ডাক্তার দের বদলাতে হবে। সব নেতিবাচক কাজ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। রোগী কে সন্তুস্ট করুন। ১৫০০  বা যেটা আপনি ন্যর্য মনে করেন সেই পরিমাণ টাকা ফি নিন। ১ জন রোগী দেখুন ২০ থেকে ৩০ মিনিট নিয়ে।

★সরকারি হাসপাতালে সিট এর অতিরিক্ত রোগী ভর্তি করানো নিরুৎসাহিত করতে হবে। আউট ডোরে ১০ মিনিট টাইম দিয়ে যে কয়জন রোগী দেখা সম্ভব  সে কয়জন রোগী দেখা হবে। এভাবে করলে দ্রুত সব সমস্যার সমাধান হবে।

মোঃ নাসির উদ্দীন আহমেদ
প্রাক্তন পরিচালক
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

খুটিনাটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url