ইউরোপে হিজাব বিড়ম্বনা হয় কেনো?
-Aiubur Rahman
ইউরোপে হিজাব বিড়ম্বনা কেন হয়!
খ্রিস্টান ধর্মগ্রন্থ বাইবেলের ৫৭ শ্লোকে নারীদের পোষাক কেমন হবে তা নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়। সে অনুযায়ী জার্মানিতে মূল ধারার প্রটেস্টান খ্রিস্টান আমার সহপাঠি অনেকেরে দেখেছি তাদের ধর্মেকে মান্য করে হিজাব পরতে। কিন্ত তাদের হিজাবের ধরণটা হয়তোবা আলাদা।
বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী খ্রীষ্টপূর্ব ১৩’শ শতাব্দি থেকে হিজাব বা চুল আবৃত করার পোশাক ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী হিন্দুদের ধর্ম ধর্মগ্রন্থ গীতাতেও শরীর কিংবা মাথা আবৃত রাখার কথা বলা আছে। ঋগবেদ-এর ১৯-২০ মন্ত্রে বলা হয়েছে, পুরুষদের নারীদের বস্ত্র পরিধান করা উচিত নয়।
ইসলামে হিজাবের বিধান ফরয। কিন্তু যখন এই ফরয বিধান কে নিয়ে মুসলিম নারীরা হাসি-তামাশা ভাবে উপস্থাপনা করে তখনই বিপত্তি বাঁধে।
তুরস্কের ইস্তানবুল, জার্মানির হামবুর্গ ও লন্ডেনের মত বড় বড় শহরগুলোতে আপনি প্রায়ই জিনস, আধুনিক শার্ট, মেকআপসহ ব্র্যান্ডেড হাতব্যাগ ও অলঙ্কার-পরিহিত মুসলমান তরুণী দেখতে পাবেন। এরা অনেকেই দুপুরের খাবারের সঙ্গে ধূমপানও করে। আবার একই সঙ্গে এরা অনেকেই হিজাবও পরে। ফলে এরা অনেকেই শুধু দর্শকদেরই নয়, চারপাশের সমাজের মধ্যেই বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। এমনও আছে অনেকেই বাসা থেকে হিজাব পরে বের হয়, কিন্তু কাজের পথে সেটি খুলে ফেলে।
জার্মানির ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করা অবস্থায় অনেক মুসলিম ছাত্রীদেরকে দেখেছি, যারা হিজাব পড়ে ধুমপান করতে। আবার অনেকে সচারাচর হিজাব পড়লেও বিভিন্ন পার্টি বা অনুষ্ঠানে নিজেদেরকে খোলামেলা ভাবে উপস্থাপনা করতে পছন্দ করে। আর এই প্রভণতা বাংলাদেশীদের ভিতর সবচেয়ে বেশি।
যদিও এ কথা সত্য এইসব মেয়েদের যে কোনো পোষাক পরার সম্পূর্ণ অধিকার আছে, কিন্তু তাদের এমন আচরণ সমাজকে শঙ্কিত করে যদি তাদের এইসব আচরণ সাংস্কৃতিক-পরিচিতি-সংকটের বহিঃপ্রকাশ হয়।
আমি নিজ রুচির স্বাধীনতায় বিশ্বাসী যতক্ষণ তা আইন ও আমার বসবাসকারী দেশের সংস্কৃতির ও ধর্মিয় পরিপন্থী না হয়। বর্তমানে হিজাবের অর্থ ভিন্ন ভিন্ন মানুষের কাছে ভিন্ন ভিন্ন। কারও কাছে হিজাব আপন সংযম, নীতিবোধ এবং স্বাধীন ইচ্ছার প্রতীক। অথচ এই একই হিজাব অন্যজনের কাছে লিঙ্গবৈষম্যের বোধ সৃষ্টি এবং নারীদের শারীরিক এবং রূপকীয়ভাবে অবদমিত করার মাধ্যম। যে জিনিসটি ঐতিহাসিকভাবে একসময় ছিল স্বাতন্ত্র্যের প্রতীক।
ইউরোপের মুসলিম পরিবারগুলো হিজাবের তাৎপর্য যদি পারিবারিক ভাবে সন্তানদেরকে শিক্ষা দিতে পারে তাহলে হিজাব নিয়ে সমাজে বিভ্রান্ত থাকার কথা না। কিন্ত আমাদের ইউরোপের মুসলিম পরিবারগুলো একটু আধুনিক হতে গিয়ে সচারচর সন্তানদেরকে হিজাব পরালেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সন্তানদেরকে খোলামেলা ভাবে উপস্থাপনা করতেই বেশি পছন্দ করে। পরিশেষে এই সব সন্তানেরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যখন প্রবেশ করে তখন হিজাবের ইসলামিক আকিদাটা তাদের কাছে তুচ্ছই মনে হয়। একটা পর্যায়ে হিজাব তাদের কাছে কখনো ফ্যাশন হিসাবে ব্যবহার আবার কখনো তুচ্ছ মনে করে ডাস্টবিনে নিক্ষেপ। আর এরাই একটা সময় স্কার্ট পরতেও ছাড়েনা। আর এইসব পাশ্চাত্য জীবনে সচারচর ঘটে থাকে। যার পরিনতি অন্য সম্পদায়ের মানুষ ইসলামের হিজাব সম্পর্কে বিভ্রান্ত হয়ে থাকে।
আমার তুরস্কের জীবনে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত অনেক সহপাঠিদেরকে দেখেছি, তুরস্কে আসার প্রাথমিক পর্যায়ে শুধু হিজাবই নয় নেকাব ও পরতে। কিন্ত সময়ের বিবর্তনে তাদেরকে হিজাব নেকাব ছেড়ে স্কার্টে রুপান্তরিত হবে। কিন্ত ব্যতিক্রম ও আছে, ইউরোপের দেশ সমূহ থেকে আগত খোলামেল পোষাকে অভ্যস্ত অনেক মুসলিম মেয়ে তুরস্কে হিজাবে অভ্যস্ত হতে।
ইসলাম বিনয় ও শালীনতা প্রচার করে এবং সমাজের মধ্যে অনৈতিকতাকে হ্রাস করতে চায়।হিজাব কেবল একটি মাথার স্কার্ফ নয় এর চেয়েও বেশি কিছু , এটি বিনয়ের একটি পোষাক কোড যা আমাদের মানসিক এবং আত্মিক ভাবে আমাদের প্রশান্তি দেয় । তাই ইসলামিক এই পোষাক কোডটাকে অন্য সম্পদায়ের মধ্যে বিভ্রান্ত ভাবে উপস্তিত করা আমাদের কোন ভাবেই সমুচিত নয়।
খুটিনাটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url