প্রবাসীর লাশ টাকা খরচ করে আনতে নারাজ স্বজনরা।

 হায়রে দুনিয়া নিজের আপনজনের মৃত্যুতেও টাকার গন্ধ খুঁজে বেড়ায়।



লন্ডনে গত বৃহস্পতিবার রাতে আমার সমবয়সী এক পরিচিত দেশী(ঢাকার) বন্ধু #আরাফাত ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার সাথে আমার পরিচয় মোটামুটি ৮-৯ বছরের মত, আর পরিচয়টা হয়েছিলো মূলত আমার মার্কেটের অপজিশন সাইডে একটা দোকানে জব করতো সেখান থেকে। একেবারে শান্তশিষ্ট একজন সাধাসিধে মানুষ ছিলো সে, আর সাধাসিধে শান্তশিষ্ট কেন বললাম তাহলে শুনুন। গত ৪ বছর আগে উনার দোকান থেকে এক ড্রাগী কাষ্টমার কিছু একটা জিনিস জোড় করে নিয়ে যাচ্ছিলো আর তখনি উনি বাধা দিতে গেলে উনাকে ৩-৪ বার ছুরি পেটের ভিতর ঢুকিয়ে দেয় কিন্তু সে প্রতিহত করবো দূরের কথা কিছুই করেনি, এইজন্যই হাবলা সাধাসিধে বলেছি। তারপরে বেচারা অনেকদিন হসপিটালে ছিলো এবং রিকোভার হওয়ার পরে আবার কাজে যোগ দিয়েছিল। মানুষটার চালচলন এত সাদাসিধা ছিল যে একটা নতুন কাপড়-চোপড় পড়তেও আমি কখনো দেখি নাই এবং তার রুমমেট বললো সে ভালো করে খাওয়া দাওয়াও করে নাই টাকা শেষ হয়ে যাবে বলে(হয়তো)। একটা জিনিস দেখলাম সে সারা বছর ফুল টাইম জব করতো ইনকামও ভালো ছিলো কিন্তু এইদেশে এমন কিছু করতেও দেখি নাই হয়তো সব টাকা পরিবারকে দিয়ে দিছে, না হয় আল্লাহ পাক ভালো জানে টাকা কোথায় আছে।

যদিও পরসোনাল বিষয় তারপরেও উনার টাকা পঁয়সার সম্পর্কে কথা কেন বললাম তাহলে শুনুন। উনি ৫-৬ মাস আগে থেকে দেশে যাওয়ায় জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো, এর কিছুদিন পরেই উনার ব্লাড ক্যান্সার দরা পরে। প্রথম প্রথম মনে হচ্ছিলো রিকোভার হয়ে যাবে কিন্তু দিনের পর দিন শরীরের অবনতিই হচ্ছিলো, আর তার অসুস্থের পুরোটা সময় তাকে দেখাশোনা করেছে তার রুমমেট এক পাকিস্তান ভাই(যে কিনা আমারোও বন্ধু)।

এই পাকিস্তানি ভাইটা #আরাফাতের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আরাফাতের জন্য জব ছেড়ে দিয়ে দিন রাত অনেক কষ্ট করেছে এবং মৃত্যুর পরে ডেডবডি বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য যা যা দরকার সেই সব করেছে।

এরিমধ্যে আরাফাতের পরিবারের সাথে ঐ পাকিস্তানি ভাইটা সবসময় আরাফাতের সাথে ভিডিও কলে কথা সহ সবকিছুতে সহযোগিতা করেছে।


তারপরে যেদিন #আরাফাত মারা যায় সেদিন পাকিস্তানি ফ্রেন্ড #ইমরান আরাফাতের ভাইকে কল দেয় এবং বলে আপনার ভাই মারা গেছে😰😰

তখন আরাফাতের ভাই সাথে সাথে ইমরানকে বলে, কি মারা গেছে??

দেখো আমার বাপে তারে ১০ লক্ষ টাকা খরচ করে পাঠাইলো আর সে মরে গেলো, এনিওয়ে তার রুমটা ভালো করে খুঁজ করে দেখো কোথায় কোথায় টাকা আছে তারপরে আমাকে জানাইয়ো🙄

ইমরান ছেলেটা আর প্রতিউত্তরে তার ভাইকে কি বলবে এটা তার জানা ছিলো না, সে একেবারে চুপ হয়ে গেছিলো।

ভাই ১২-১৩ বছর ইনকাম করে দিলো তারপরে তাদের পেট ভরলো না, অবশেষে মৃত্যুর পরেও আহাজারির বদলে তার টাকাপয়সার খোঁজে ব্যস্ত😰

এনিওয়ে গতকাল আরাফাতের জানাজা নামাজে শরীক হয়েছিলাম কিন্তু পিকচার নিতে দেয় নাই মসজিদ কমিটিগণ।

আহারে বেঁচে থাকতে আমার সাথে প্রায়দিন সকালবেলা দেখা হতো, আর দেখলেই হাসিমুখে বলতো ভাই কেমন আছেন আরোও কত কি😒

আর বলবে না কোনদিন ভাই কেমন আছেন, আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুক এবং তার মাকে এই শোক বহন করার মত ক্ষমতা দান করুক আমিন।

পরিশেষে একটা কথা বলতে চাই,

প্রবাসে যেনো কারো মৃ*ত্যু না হয়, আল্লাহ সকল প্রবাসীদের স্বাভাবিক মৃ*ত্যু নিশ্চিত করুন, আমিন😰😰

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

খুটিনাটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url