আমরা এমন মার্কেটিং চাই না

আমরা এমন মার্কেটিং চাই না 
-ফারাজ রহিম

বাংলাদেশে যত ক্রিমিনাল অর্গানাইজেশন্স আছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এডমিশন কোচিং সেন্টারগুলো। কেন? সেই ব্যাখাতেই আসছি।

কয়েকদিন আগে, মেডিকেল এডমিশন টেস্ট’র রেজাল্ট পাবলিশ হয়েছে। এর মধ্যে সবাই যারা প্রথম দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় হয়েছে তাদের নিয়ে অনেক উচ্ছ্বসিত। এতে দোষের কিছু নেই। তবে সমস্যাটা অন্য জায়গায়। কিছু কিছু এডমিশন কোচিং যা করলো তা হচ্ছে যে, তারা লাইভে সব সফল হওয়া ছাত্রদের এনে এনে তাদের ইন্টারভিউ নিচ্ছে। তাদের ইন্টারভিউগুলো কিছুটা পডকাস্ট স্টাইলে। নিঃসন্দেহে এর পিছনে তাদের কোচিং সেন্টারের এর প্রমোশন করা ছাড়া আর কোনো কারণ নেই।

একটা মার্কেটিং পরিকল্পনা বা স্ট্র্যাটেজি কতটা ডিসেপটিভ হতে পারে, তার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ এ ধরনের ফেসবুক লাইভ।  দেখুন—আমাদের সময় মেডিকেলে (২০১৭ সালে) সিট ছিল ৪০০০+এর মতন। আর পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখের অধিক। এবার একটু খেয়াল করে দেখুন, এই এক লাখ শিক্ষার্থী যদি তাদের সেরাটাও দিয়ে থাকে, সবাই যদি জেনেটিকালি জিনিয়াস হয়েও থাকে; তবুও কিন্তু তাদের সবার পক্ষে মেডিকেলে চান্স পাওয়া সম্ভব না। 

তো এর মানে এটা দাঁড়ায়, যে ৯৬ হাজার শিক্ষার্থী যারা চান্স পায়নি তারা লুজার? বাংলায় বললে তারা হারু পার্টি? কিন্তু আপনি যদি এডমিশন টেস্টের কোচিং সেন্টার গুলোর মার্কেটিং ক্যাম্পেইন দেখে থাকেন, তবে দেখবেন যে শুধু যারা চান্স পেয়েছে তারাই হিরো। তারাই জীবন যুদ্ধে জয়ী। এখন নিজেকে এমন একজন ছাত্র হিসেবে ভাবুন, যে কিনা মেডিকেলের ভর্তির জন্যে রাত কে দিন এবং দিন কে রাত বানিয়ে ফেলেছেন। যে কিনা নাওয়া, খাওয়া বাদ দিয়ে সারাদিন ডুবে থাকতেন আবুল হাসান স্যারের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বইতে, কিংবা গাজী আজমল স্যার এর প্রাণীবিদ্যা বইতে।

যখন এরকম একজন হয়ে আপনি সামান্য কিছু নাম্বার এর জন্যে মেডিকেলে চান্স হলোনা, কিংবা কোন কারণে সেই এক ঘন্টার পরীক্ষা খারাপ হবার কারণে মেডিকেলে চান্স হলোনা, তখন যদি আপনি ফেসবুকে আসেন এবং এসে দেখেন একের পর এক চান্স পাওয়া স্টুডেন্ট দের নিয়ে ফেসবুকে লাইভ হচ্ছে, একের পর এক তাদের কে অভিবাদন এ ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে— তখন আপনার কেমন লাগবে?

এরকম পরিস্থিতিতে যে পরেছে, সেই জানে। সে সময় বেচে থাকার ইচ্ছা কতটুকু থাকতে পারে একজন ছাত্রের? আর যে সময়ের যে বয়সের, ছাত্রের কথা আমি বলছি সেই সময়তে সেই ছাত্রের বা ছাত্রীর বয়স কতইবা? ১৮/১৯/২০?

এই বয়সে যখন একটা ছাত্র যখন তার কোচিং সেন্টারের করা লাইভ দেখবে, তখন তার মনে কী প্রভাবটা পড়বে?

এবার অনেকে বলতে পারেন যে, তাহলে যারা সফল হয়েছে তারা কি তা উপভোগ করবে না? অবশ্যই করবে। আমার সাথে যদি মেধাতালিকায় প্রথম হওয়া কারো দেখা হয় আমি তার সাথে অবশ্যই একটা সেলফি তুলে রাখার চেষ্টা করবো। কিন্তু কথা হচ্ছে, আমার এখানে  ডিসেপটিভ মার্কেটিং এবং কেপিটালিজম এর খারাপ দিক নিয়ে।

একটা কোচিং এর অসংখ্য ছাত্রছাত্রী থাকে। আমি ভর্তি পরীক্ষার সময় যে যে প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছিলাম তাদের কারো কারো ছাত্র সংখ্যা ১৫ হাজার+ ছিল। এখন সেখান থেকে যদি ২০০০+ চান্স পেয়ে থাকে, বাকি ১৩ হাজার এর কী হবে তাহলে? বাকি ১৩ হাজার কি তাদের ছাত্র না? যদি যে প্রথম হয়েছে তার পেছনে অবদান থাকে কোচিং এর, তবে যে চান্স পায়নি তার চান্স না পাওয়ার পিছনে কেন কোচিং এর ব্যার্থতা নেই? 

আপনি কি মনে করেন এই কোচিং সেন্টার গুলো এত সব লাইভের আয়োজন করে থাকে, এত সব সংবর্ধনা দিয়ে থাকে শুধু এবং শুধুমাত্র সাফল্যের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্যে?

মজার ব্যাপার হলো—এত বড় একটা সংখ্যার মানুষ চান্স পায়না, অথচ তাদের নিয়ে কোন কোচিং সেন্টার কথা বলেনা। শুধু মাত্র বলে সেই সমস্ত ছাত্রদের নিয়ে, যারা কিনা সফল হয়েছে ভর্তি পরীক্ষায়। আরে ভাই, যারা কিনা ভর্তি পরীক্ষায় সফল—তাদের বেলায় তো সম্পুর্ণ সমাজ তাদের সাথে রয়েছে। আপনারা কি চিন্তা করতে পারতেন না সেই সমস্ত ছাত্রদের কথা, যারা কিনা সেদিন তাদের স্বপ্ন থেকে ছিটকে পড়েছে?

ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট এর পরে সেখানে শুধু চান্স পাওয়া আর চান্স না পাওয়ার হিসাব হয়। কিন্তু একটা জিনিস এর হিসাব হয়না! সেটা হচ্ছে, অনেক আত্মার মৃত্যুর হিসাব। আর কোন কোন ক্ষেত্রে সেই আত্মার মৃত্যুর জন্যে দায়ী এডমিশন কোচিং এর মার্কেটিং ক্যাম্পেইন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

খুটিনাটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url