বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে

ফিউচার মানি হিসেবে পরিচিত, বিটকয়েন সাধারণত কিভাবে কাজ করে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানাব। বর্তমানে সবকিছু অনলাইন ভিত্তিক হয়ে উঠছে। আমরা সবকিছুই ডিজিটালাইজ করে ফেলছি। আর এই ডিজিটাল যুগে আপনি নিশ্চয় বিটকয়েনের কথা শুনেছেন। সাধারণত বিটকয়েন সম্পর্কে একটু জানতে গেলে আপনার মাথায় আসে, বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে?

পাঠক, আজকে আপনার সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। আপনার যদি বিটকয়েন সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা না থাকে তাহলে এই পোস্টটি মনযোগ সহকারে পড়ুন। সবকিছু ডিজিটালাইজ হওয়ায় আমাদের মার্কেটে গিয়ে লাইনে দাঁড়ে থাকতে হয়না বা সরাসরি মুদ্রা দিতে হয়না। আমরা এখন ক্রেডিট কার্ড /ডেভিড কার্ডের মাধ্যমে আমাদের পন্যের দাম পেমেন্ট করতে পারি। এ কাজকে আরো সহজ করে দিচ্ছে বিটকয়েন নামক ক্রিপ্টোকারেন্সি।

বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে?

বিটকয়েন একটি ডিসেন্ট্রালাইজড মুদ্রা, যার অর্থ এটি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোন কেন্দ্রীয় ব্যাংক, কর্তৃপক্ষ বা সরকার নেই। সোজাভাবে বলতে গেলে, এর কোন মালিক নেই। অপরদিকে আমাদের ব্যবহৃত মুদ্রা গুলো কোন ব্যাংক বা কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। যে কেউ বিটকয়েন ব্যবহার করতে পারে, যেমন আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকি কিন্তু এর কোন মালিক নেই।ঠিক একইভাবে বিটকয়েনও সবাই ব্যবহার করতে পারে। আমরা অনলাইনে পেমেন্ট করতে বা যেকোন ধরনের লেনদেন করতে বিটকয়েন ব্যবহার করে থাকি।

বিটকয়েন ব্যবহার সবচেয়ে দ্রুত ও সবচেয়ে দক্ষ বলে বিবেচিত হয়। আজকাল অনেকেই অনলাইন ডেভেলপার, উদ্যোক্তা, অলাভজনক সংস্থা ইত্যাদি বিটকয়েন ব্যবহার করছে। এই কারণে সারাবিশ্বে বিটকয়েন বৈশ্বিক অর্থ প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।

বিটকয়েন পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক ভিত্তিক কাজ করে, যার অর্থ মানুষ সহজেই একে অপরের সাথে সরাসরি কোন ব্যাংক, ক্রেডিট কার্ড বা কোম্পানির মাধ্যমে লেনদেন করতে পারে। আমরা যেমন অন্যান্য মুদ্রা ব্যবহার করে অনলাইনে লেনদেন করি, তখন আমাদের ব্যাংকের পেমেন্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। তবেই আমরা লেনদেন করতে পারি। আমাদের লেনদেনকৃত প্রত্যেকটি হিসাব ব্যাংক কর্তৃক আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সংরক্ষিত থাকে, এটি বোঝার জন্য যে কোথায় কত টাকা ব্যয় করেছি। কিন্তু বিটকয়েনের নির্দিষ্ট মালিক না থাকায় এটিতে লেনদেনকৃত হিসাব পাবলিক লেজারে(অ্যাকাউন্ট) রেকর্ড করা হয়, যাকে বিটকয়েন “ব্লকচেইন” বলা হয়। 

বিটকয়েনের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় একটি উন্মুক্ত সোর্স সফটওয়্যারের মাধ্যমে। বিটকয়েন যদি গ্রাহক কর্তৃক অন্য কারো অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয় তাহলে এই লেনদেনের জন্য একটি স্বতন্ত্র  ইলেকট্রনিক সিগনেচার তৈরি হয়। তা অন্যান্য মাইনার কর্তৃক নিরীক্ষিত হয় এবং নেটওয়ার্কের মধ্যে গোপন অথচ সুরক্ষিতভাবে সংরক্ষিত থাকে। সেই সাথে গ্রাহকদের বর্তমান লেজার কেন্দ্রীয় তথ্য ভান্ডারে হালনাগাদ হয়।

ধরা যাক, আপনি বিটকয়েন ব্যবহার করে কোন পন্য কিনবেন। তাহলে আপনার ডিজিটাল ওয়ালেটে বিটকয়েন থাকতে হবে। বিক্রেতা আপনাকে পন্য দিবে, বিনিময়ে আপনি আপনার ওয়ালেট থেকে বিটকয়েন দিবেন। ফলে সে পরিমান কয়েন বিক্রেতার ওয়ালেটে জমা হবে, যা তিনি পরবর্তীতে ব্যবহার করতে পারবেন। অপরদিকে সমপরিমাণ বিটকয়েন আপনার ওয়ালেট থেকে কমিয়ে দেওয়া হবে। আপনাদের এই লেনদেন পাবলিক লেজারে সংরক্ষিত করা হবে, যা অত্যন্ত গোপনীয়, আপনি এবং বিক্রেতা ছাড়া কেউ জানতে পারবেনা।

বিটকয়েন কিভাবে উৎপন্ন হয়?

বিটকয়েন পাওয়ার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে বিটকয়েন মাইনিং বা উৎপাদন। এর জন্য আপনার প্রয়োজন হবে উচ্চ গতি সম্পন্ন প্রসেসর যুক্ত কম্পিউটার ও ভালো মানের হার্ডওয়্যার। আমরা যখন কোন লেনদেন করি, ব্লকচেইনে তা একটি ব্লকের মধ্যে সংরক্ষিত থাকে এবং তারা তা যাচাই করে থাকে। যতক্ষন মাইনার দ্বারা একটি লেনদেন পরিক্ষিত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তা পেন্ডিং অবস্থায় থাকে। যারা এই কাজ করে থাকে তাদের বিটকয়েন মাইনার বলা হয়।

মাইনারের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কম্পিউটার ও GPU থাকতে হয়। এর মাধ্যমে তারা যাচাই করে থাকে এবং তারা পুরষ্কার হিসেবে কিছু বিটকয়েন পায়। এভাবে নতুন বিটকয়েন বাজারে আসে। যে কেউ চাইলে এটি করতে পারে, তবে এর জন্য প্রয়োজন উচ্চ মানের কম্পিউটার যা অনেক ব্যয়বহুল হয়ে থাকে। ফলে সবাই বিটকয়েন মাইনিং করতে পারেনা।

প্রতিটি দেশে যেমন মুদ্রা মুদ্রণ করার সীমা রয়েছে ঠিক তেমনি ভাবে বিটকয়েনেরও একটি সীমা রয়েছে। বাজারে ২১ মিলিয়নের বেশি বিটকয়েন আসতে পারবেনা। পাঠক, এছাড়াও আপনি যেভাবে বিটকয়েন পেতে পারেন, আপনি বিটকয়েন সরাসরি কিনতে পারেন, প্রচলিত মুদ্রা গুলোর বিনিময়ে এবং তা আপনার কাছে জমা রাখতে পারেন। আপনি অনলাইনে কারো কাছে কোন পন্য বিক্রি করে, বিনিময়ে ক্রেতার কাছ থেকে বিটকয়েন নিতে পারেন।

বিটকয়েন কোথায় সংরক্ষণ করবেন?

আমরা শুধুমাত্র ইলেকট্রনিকভাবে বিটকয়েন সংরক্ষণ করতে পারি। এটি রাখার জন্য একটি বিটকয়েন ওয়ালেট প্রয়োজন। বিভিন্ন ধরনের বিটকয়েন ওয়ালেট রয়েছে। যেমনঃ
  • মোবাইল ওয়ালেট
  • ডেক্সটপ ওয়ালেট
  • অনলাইন/ওয়েব ভিত্তিক ওয়ালেট
  • হার্ডওয়্যার ওয়ালেট
আপনি যেকোন একটি ব্যবহার করে বিটকয়েন জমা রাখতে পারেন। জমা রাখার আগে, সেখানে একটা অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে।

এই ভার্চুয়াল মানিব্যাগটি একটি ঠিকানা আকারে একটি ইউনিক আইডি দেয়। আপনি কোথাও বিটকয়েন উপার্জন করলে সেগুলো আপনার ওয়ালেটে সংরক্ষণের জন্য এই আইডিটি প্রয়োজন পড়বে। আপনি এই ওয়ালেটে বিটকয়েন সংরক্ষণ করতে পারেন, স্থানান্তর করতে পারেন। এই অ্যাকাউন্ট আপনার বিভিন্ন ধরনের ভার্চুয়াল অ্যাকাউন্ট যেমন: বিকাশ, নগদ ইত্যাদির মতো কাজ করে থাকে।

পাঠক, বিটকয়েনের চাহিদা দিন বেড়েই চলছে। আর এর লেনদেন প্রক্রিয়া পিয়ার টু পিয়ার হওয়ায়, এটি খুব গোপনীয় ভাবে সম্পন্ন হয় অর্থাৎ আপনি এবং যার সাথে আপনি লেনদেন করবেন তিনি ছাড়া কেউ জানতে পারবেনা। এটি ব্লকচেইনে সুরক্ষিত ভাবে সংরক্ষিত থাকে। আবার মাইনার দ্বারা প্রত্যেকটি লেনদেনের ক্রিপ্টোগ্রাফি চেক করা হয়। ফলে লেনদেনে কোন ধরনের ঝামেলা হওয়ার সুযোগ থাকেনা।  আশা করি, আপনি আপনার কাঙ্খিত উত্তর পেয়েছেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

খুটিনাটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url